ভাদ্র মাস অথচ ভাদ্র মাসের অন্যতম ফল এখনো খাননি, তা কি হয়?বলেন তো কোন ফলের কথা ব্লছি।
হ্যা, তালের কথা বলছি! ভাদ্র মাসের এই তালপাকা গরমে সত্যি সত্যি তাল পেকে
গেছে! ফল হিসেবে তাল বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়। তাই ভাদ্র মাস এলেই তাল ও তালের বিভিন্ন ধরনের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়! তালের আদিনিবাস
আফ্রিকাতে হলেও পরে তা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশে। আমাদের
দেশে যে তাল পাওয়া যায় তার ইংরেজি নাম Asian Palmyra Palm এবং
বৈজ্ঞানিক নাম Borassus flabellifer। এর আদিনিবাসও এই
ভারতীয় উপমহাদেশেই! আরো ভালো করে বলতে গেলে দক্ষিণ ভারতে। একেকটি তালগাছ প্রায় ১০০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে
পারে। গাছগুলো লম্বায় ৩০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এর পাতাগুলো হয় ছড়ানো
পাখির পাখার মতো। পাতা ২ থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে। তালগাছের কোনো কিছুই
ফেলনা নয়। এর পাতা দিয়ে ঘরের ছাউনি, মাদুর, ঝুড়ি, হাতপাখা, টুপি,
ছাতা ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
অতীতে কালে তালপাতা লেখা ও ছবি আঁকার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত
হতো। তাল ফল ছোট থাকা অবস্থায় 'তালখুর' হিসেবে খাওয়া হয় এবং পাকা তালের রস দিয়ে
পিঠা,
ক্ষীর, বড়া , পিঠা, ইত্যাদি তৈরি করা হয়। খেজুর গাছের মতো তালগাছ থেকেও তালের রস সংগ্রহ করা হয়। এই রস দিয়ে পাটালি গুড়, মিছরি, তাড়ি ইত্যাদি তৈরি করা হয়। তালের বীজ
তালশাঁস হিসেবে খাওয়া হয়। ভারতে
তালশাঁসের সরবত খুবই জনপ্রিয়। শুধু খাবার হিসেবে নয়, তালগাছ
সাহিত্যের পাতাতেও বিভিন্ন স্থান
দখল করে আছে। যেমন - 'ঐ দেখা যায় তালগাছ, ঐ আমাদের গাঁ' অথবা রবিঠাকুরের 'তালগাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে' ইত্যাদি। ফল হিসেব
তালের পুষ্টিগুণও কম নয় অনেক বেশি । পাকা
তালের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে - খাদ্যশক্তি- ৪৩ কিলোক্যালরি জলীয়
অংশ- ৮৭.৬ গ্রাম আমিষ- .৮ গ্রাম চর্বি- .১ গ্রাম শর্করা- ১০.৯ গ্রাম খাদ্যআঁশ- ১
গ্রাম ক্যালসিয়াম- ২৭ মিলিগ্রাম
তবে আজ আমি আপনাদেরকে
দেখাবো তালের রস বা তালের জুস কিভাবে করতে হয়। অনেকেই আমরা জানি না যে তালের রস
পাতালের জুস খুব তাড়াতাড়ি কিভাবে তৈরি করতে হয়। তাই আজ আমি আপনাদেরকে খুব সহজে
চটজলদি অল্প সময়ের মধ্যে তালে রস কিভাবে করতে হয় সেই দেখাবো চলুন তাহলে দেখে
নেওয়া যাক। এই তালের রস থেকে আমরা আ বিভিন্ন ধরনের পিঠা পায়েশ পুলি বড়া ইত্যাদি
তৈরি করতে পারি।
তালের রস/ তালের জুস্ বের করার পদ্ধতি
এখন তালের মৌসুম প্রায় শেষের দিকে! তারপর এখনও সময় আছে। তালের রস সংরক্ষণ করে সারা বছর যখন ইচ্ছা তালের বিভিন্ন পদের নাস্তা তৈরি করতে পারবেন।
তাল ভালো করে ধুয়ে উপরের অংশ টেনে খুলে ফেলুন। এবার তালের খোসা ছাড়িয়ে নিন। আমের খোসার মতোই টেনে খুলে ফেলতে পারবেন এটি। আঁটিগুলো আলাদা করে নিন। একটি বাটিতে পানি ভর্তি করে তালের আঁটি ধুয়ে নিন। আঁটির আঁশ নরম হয়ে গেলে স্টিলের/প্লাস্টিক ছাঁকনির উপরে ঘষে ঘষে রস বের করুন। সবগুলো আঁটি থেকে রস বের করা হয়ে গেলে একটি পাতলা কাপড়ে ঢেলে দিন রস। কাপড়ের মুখ বেঁধে ঝুলিয়ে দিন উঁচু কোনও জায়গায়। খুব বেশি শক্ত করে বাঁধবেন না। ঘণ্টা দুয়েক এভাবেই ঝুলিয়ে রাখুন।
তালের রস সারা বছর রেখে খেতে পারবেন চাইলে। এজন্য ছোট ছোট বাটিতে প্রয়োজন মতো রস রেখে ঢাকনা লাগিয়ে রেখে দিন ডিপ ফ্রিজে। ইচ্ছে মতো বের করে খান বছর জুড়ে।যে সময় তালের মৌসুম থাকবে না তখন বের করে মনের মতো পিঠা বানিয়ে নিতে পারেন।
No comments:
Post a Comment